বিডিনিউজ ১০ ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল এক সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার আগে ও পরের প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের পরীক্ষা শেষ করতে বলা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক নয়।
বুধবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ইসির বৈঠক শেষে ইসি সচিব এসব কথা জানান। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া ওই বৈঠক চলে দুই ঘণ্টা। এতে ইসি সচিব নিজেই সভাপতিত্ব করেন।
এদিকে ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি অবহিত করতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে আজ সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনাররা। বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে রাষ্ট্রপতির কাছে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য তফসিল উপস্থাপন করা হতে পারে।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা শেষে ইসি সচিব বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের আগেই সব ধরনের বার্ষিক পরীক্ষা এবং ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য সব বোর্ড, মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।
স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেহেতু ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে এবং একই সঙ্গে শিক্ষকরা ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন, তাই এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তফসিলের পর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে মাদকসেবী, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগেই সব ব্যাংকে ঋণখেলাপিদের তালিকা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সচিব বলেন, বৈঠকে আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বরের শেষে প্রচণ্ড শীত থাকবে। জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
কবে থেকে সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেয়ার বিষয়টি শিথিল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঋণ ও বিলখেলাপিদের প্রার্থী হওয়ার শর্ত সহজ করা হচ্ছে।
সচিব বলেন, প্রার্থীদের আয়কর রিটার্নের কপি দেয়ার বাধ্যকতা থাকছে না। যাদের ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) আছে, তারা দেবেন। আর যাদের নেই, তাদের দেয়ার প্রয়োজন হবে না। ইসি এটি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের অনেক কৃষকও নির্বাচনে অংশ নেন। তারা আয়করের বাইরে রয়েছেন। তাই নির্বাচনে সবার অংশ নেয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে আয়কর রিটার্নের কপি দেয়ার বিষয়টি শিথিল করা হয়েছে।
সচিব আরও বলেন, আগে নির্বাচনে প্রার্থী হতে ঋণখেলাপিদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার ন্যূনতম সাত দিন আগে ঋণ পরিশোধের বিধান ছিল। এখন তা সংশোধন করে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগ পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ রাখা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের এই সংশোধনী মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে। সচিব জানান, বিদেশ থেকে যেসব পর্যবেক্ষক আসবেন তাদের ভিসা প্রসেসিং যাতে খুব সহজীকরণ হয় এবং তাদের ভেটিংগুলো যাতে জননিরাপত্তা বিভাগ খুব দ্রুত দেয় সেভাবে তাদের আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচনপূর্ব সময়ে আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন দেখভাল করার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছি। এছাড়া তফসিল ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে সারা বাংলাদেশে প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকায় যাতে ব্যানার পোস্টার অন্যান্য প্রচারণার জন্য বিলবোর্ড না থাকে সেজন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছি।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ : ইসি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আজকের সাক্ষাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী অংশ নেবেন। এছাড়া ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও সাক্ষাতে উপস্থিত থাকবেন।
রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল। ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ১৯ নভেম্বর বঙ্গভবনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আজকের সাক্ষাতের পর আগামী শনিবার কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আগামী রোববারও একটি সভার আয়োজন করা হতে পারে। কমিশন সভায় তফসিল অনুমোদনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। ওই ভাষণেই ঘোষণা করা হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল।